আইসল্যান্ডের এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে আপনি ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির স্বাদ নিতে পারবেন।
বিশ্বব্যাপী আগের চাইতে এখন মানুষ অনেক বেশি ভ্রমণ করেন। বিশ্বব্যাপীঅতিরিক্ত পর্যটক কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!
পেরুর মাচুপিচু, স্কটল্যান্ডের এর সিনিক আইল অফ স্কাই; জাপানে গেইসাদের শহর; আমস্টারডামের এরেড লাইট ডিসট্রিক্ট; ভেনিসের খাল, ক্যালিফোর্নিয়া এর পপির ক্ষেত; থাইল্যান্ডের মায়া বে সৈকত কিংবা প্যারিসের ল্যুভ জাদুঘর যেখানেই যান, সব জায়গায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়বে।
মানুষের অতিরিক্ত চাপ, পরিবেশ নোংরা করা, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা, মাতালদের মতো বা নেশাগ্রস্ত আচরণ, কাউকে বাজেভাবে স্পর্শ করা বা তাদের জিনিষপত্র দখল, অথবা অতিরিক্ত দামাদামি করা আজকাল পর্যটন শিল্পের জোয়ারে ভেসে এসেছে এই সমস্যাগুলোও।
আবার ব্যাপারটা এমন নয় যে মানুষকে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা উচিত।
প্রয়োজন হল একজন ভাল পর্যটক হওয়া। এজন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন।
স্টোনহেঞ্জের সৌন্দর্য না দেখে সেলফি তুলতেই ব্যস্ত এক পর্যটক।
আপনি কেন সেখানে যেতে চান?
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার জানুয়ারি মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৪০ কোটি।
১৯৫০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই কোটি। ১৯৯৮ সালে ৬০ কোটি ২০ লাখ। ২০০৮ সালে ৯৩ কোটি ৬০ লাখ।
২০৩০ সালে এই পর্যটকের সংখ্যা ১৮০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই জোয়ারের অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে, বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হার বাড়তে থাকা, বিমান ভাড়া কমে যাওয়া, সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পর্যটন পরিকল্পনা এবং সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের প্রভাব।
এর মধ্যে থেকে আপনি জানার চেষ্টা করুন যে আপনি কেন ভ্রমণ করতে চান।
“প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি কেবল মানুষকে দেখানোর জন্য কোথাও ভ্রমণ করতে চান?”
নাকি আপনি ইতিহাস পছন্দ করেন, নাকি শুধুই প্রকৃতি?
অন্য কৌশলটি হল নিজেকে জিজ্ঞাসা করা, আপনি কী দেখতে চান এবং কোন বিষয়ের প্রতি আপনার তেমন আগ্রহ নেই।
যদি আপনি জাদুঘর পছন্দ না করেন তাহলে ল্যুভ বা উইজে ভিড় করার কোন মানে নেই।
শুধু গৎবাঁধা জায়গায় না ঘুরে এমন কোথাও যান যেখানে পর্যটকদের ভিড়ভাট্টা কম।
দূর থেকে দূরে ভ্রমণ করুন
কোথাও যাওয়ার আগে, সেখানকার বিষয়ে আগে জানুন। হতে পারে সেটা বই পড়ে বা সিনেমা দেখে।
ধরেন আপনি চেক প্রজাতন্ত্রের কোন লেখকের একটি বই পড়েছেন, তার দেশকে নিয়ে লেখা।
এরপর যদি আপনি প্রাগে ভ্রমণ করেন। তাহলে দুইদিনের বদলে এক সপ্তাহ সময় ধরে শহরটা ঘুরে দেখুন।
গৎবাঁধা পর্যটন এলাকায় না গিয়ে এর বাইরের জগতটাও দেখুন।
এটা ঠিক যে আপনি প্যারিসে গেলে আইফেল টাওয়ার অবশ্যই দেখতে চাইবেন, তা সে যতোই ভিড় থাকুক।
সেটা অবশ্যই দেখবেন। সেইসঙ্গে প্যারিসের এমনও আরও অনেক অলিগলি রয়েছে যেটা হয়তো আজীবন আপনার স্মৃতি হয়ে থাকবে।
প্যাকেজ ট্যুরে ঘুড়ে বেড়ানোর স্বাধীনতা তেমনটা থাকেনা।
অ্যাপ ব্যবহার করুন
ভিড়যুক্ত স্থানগুলো এড়িয়ে যেতে আপনি বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন।
“ভেনিস, বার্সেলোনা, ডুব্রোনিকের মতো জায়গায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় ভিড়ভাট্টার ক্রুজ শিপ বা জাহাজ ছোট ক্রুজ জাহাজের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করুন।”
কারণ ছোট জাহাজগুলো ছোট বন্দরগুলোয় ভিড়তে পারে। আর আপনাকে দিতে পারে অন্যরকম কিছু দেখার অভিজ্ঞতা।
আপনার ভ্রমন যেন আরেকজনের ধকলের কারণ না হয়।
আইসল্যান্ডীয় সমাধান
আইসল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ ৪০ হাজার। কিন্তু ২০১৮ সালে দেশটিতে ভ্রমণের জন্য গিয়েছেন অন্তত ২৩ লাখ পর্যটক।
এখন আইসল্যান্ড চাইছে তাদের এই পর্যটকদের দেশের কয়েকটি স্থানে আটকে না রেখে দেশের বিভিন্ন দুর্গম স্থানে ছড়িয়ে দিতে।
রিকজাভিক বা ব্লু লেগুণের বাইরেও আইসল্যান্ডে আরও অনেক কিছু দেখার আছে।
এতে একদিকে নতুন কিছু দেখার সুযোগ যেমন হয় তেমনটি দেশটির অর্থনীতিও সচল হয়। সেইসঙ্গে উন্নত হয় সেই দুর্গম এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা।
জাপানে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও লিফলেটের মাধ্যমে ভাল আচরণের উপদেশ দেয়া হয়
শ্রদ্ধাশীল হওয়া
পর্যটন মানে শুধু কোথাও গিয়ে ভিড় জমানো না। এক্ষেত্রে আপনাদের সেই দেশের সংস্কৃতির আদ্যোপান্ত জানতে হবে।
“মানুষ সত্যিই সঠিক কাজটা করতে চায়, কিন্তু তাদের জানতে হবে এই সঠিক কাজটা কি।”
সেই কারণে আইসল্যান্ড ও জাপানে প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে যে পর্যটকদের কীভাবে আচরণ করা উচিত।
আইসল্যান্ডে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে রাস্তার বাইরে ড্রাইভিং করা যাবেনা, বিপদজনকভাবে সেলফি তোলা যাবেনা ইত্যাদি।
জাপানী শহর কিয়োটোতে, তারা বিভিন্ন ভাষায় লেখা লিফলেট এবং কাগজের লণ্ঠন বিতরণ করেন। যেখানে সঠিক আচরণ সম্পর্কে উপদেশ দেয়া থাকে।
কোথাও যাওয়ার আগে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করুন।
গবেষণা এবং পরিকল্পনা করা
আবাসস্থল নির্বাচনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের প্রতিশ্রুতিতে বাধা পড়বেন না।
এতে করে আপনি যেমন একজন সচেতন পর্যটক হবেন। তেমনি খরচও কমিয়ে আনতে পারবেন অনেকটাই।
আপনার যদি সীমিত টাকা থাকে। তার মানে এই নয় যে আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবেনা।
যদি ঠিক ঠাক পরিকল্পনা করেন তাহলে সীমিত বাজেটেই সম্ভব অনেক কিছু।
থাকার জন্য ইন্টারনেটে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই গবেষণা শুরু করুন। রিভিউগুলো যাচাই করুন।
নিজের গন্তব্যস্থল সম্পর্কে ভালভাবে জানুন। নিশ্চিত হন আপনি সেখানে আসলেও যেতে চান।
স্বল্প খরচের ফ্লাইট বেছে নিন।
তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, অনেকেই প্যাকেজ ট্যুরে খরচ কম হওয়ার আশায় তাদের নানা অফারে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
কিন্তু জেনে রাখা ভাল যে এসব প্যাকেজে নানা ধরণের লুকায়িত খরচ থাকে। যা এক পর্যায়ে মূল খরচ অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
তাছাড়া তাদের বেধে দেয়া সময়ে, বেধে দেয়া জায়গায় যাওয়ার কারণে আপনার ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতাও থাকেনা।
তাই মনে রাখতে হবে যেখানেই যান না কেন। সেই ব্যাপারে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন।
সেইসঙ্গে ওই স্থানের প্রতি সত্যিকার অর্থে আগ্রহী এবং সেখানকার মানুষ ও সংস্কৃতির ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল থাকা বেশ জরুরি।
সেলফি এবং বাকেট লিস্ট সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দেবেননা।
নিজের গন্তব্যস্থলকে নিজের বাড়ির মতোই আপন ভাবুন।
© বিবিসি